চট্টগ্রাম ব্যুরো
" সেইভ দ্যা নেচার অফ বাংলাদেশ " নামক একটি প্রাণী এবং পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার কর্তৃক নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ।২৩ এপ্রিল (বুধবার) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে উক্ত সংগঠনের আয়োজনে ছয় দফা দাবি বাস্তবায়নে সংবাদ সম্মেলন এর আয়োজন করেন ছাত্রলীগ নেতা রিয়াদ।
সেখানে উপস্থিত বেশ কিছু সাংবাদিক ও দুটি সংস্থার নজরে আসে " সেইভ দ্যা নেচার অফ বাংলাদেশ " নামক সংগঠনের চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জম হোসেন রিয়াদ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা।
সংবাদ সম্মেলনের শেষ দিকে সাংবাদিকরা এ ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করলে প্রথম অস্বীকার করলেও পরে স্বীকার করেন। ঐ সংগঠনের ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন শেষে মানববন্ধনের কর্মসূচি থাকলেও সেটি না করে তড়িঘড়ি করে প্রেসক্লাব প্রাঙ্গণ ত্যাগ করে মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ ও সংগঠনের অন্য নেতারা ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, " সেইভ দ্যা নেচার অফ বাংলাদেশ '" সংগঠনটির চেয়ারম্যান আ ন ম মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ কক্সবাজার জেলার খুরুশকুল এলাকার অন্তর্গত রুমালিয়ার ছড়ার বাসিন্দা। তার পিতার নাম স ম নুরুন্নবী। তার ছোট ভাই তামিম ( বর্তমানে পলাতক ) নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কক্সবাজার জেলা শাখার সেক্রেটারি । মোয়াজেম হোসেন নিজেকে সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসান মাহমুদের আত্মীয় বলে সবাইকে পরিচয় দিতেন এবং সে হাসান মাহমুদ এর বোনের মেয়েকে বিয়ে করেছে বলেও দাবি করতেন । অথচ সংবাদ সম্মেলনের প্রেস নোটে বিগত আওয়ামী সরকারকে ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করে এই মোয়াজ্জেম ।
এই ব্যাপারে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতা বলেন, " দল ক্ষমতা থাকা অবস্থায় সকল ধরনের সুযোগ সুবিধা সে , তার ভাই এবং তার পরিবার নিয়েছে । অথচ এখন ভোল পাল্টে ' সেইভ দ্যা নেচার অফ বাংলাদেশ" সংগঠন করে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ কে ফ্যাসিস্ট হিসেবে আখ্যায়িত করছে। দলের প্রায় প্রতিটা নেতা,কর্মী যেখানে দুর্বিষহ জীবন যাপন করছে সে কিভাবে প্রকাশ্যে চলাফেরার পাশাপাশি বিলাসী জীবন যাপন করছে তা আমার বোধগম্য নয় । এইসব ভোল পাল্টানো ও সুবিধা বাদীদের কারণে আজ দলের এই অবস্থা "।
এই সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম হোসেন রিয়াদ ১৯৯৭ সালে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার কর্তৃক কোরিয়ান ইপিজেড ( কেইপিজেড) প্রতিষ্ঠা করা হলেও সেটি অবৈধ বলে উল্লেখ করেন। এই সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে সাংবাদিকরা তাকে প্রশ্ন করলে তার কোন যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য উত্তর তিনি দিতে পারেন নি ।
এছাড়া সংবাদ সম্মেলনে মোয়াজ্জেম চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিমের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উত্থাপন করেন। কিন্তু তথ্য অনুসন্ধানে দেখা যায় , " চট্টগ্রামের বন সংরক্ষক মোল্লা রেজাউল করিম ৫ আগস্ট ছাত্র- জনতার গণঅভ্যুত্থানের পর সেপ্টেম্বর মাসে কর্মস্থলে যোগদান করেন । দায়িত্ব গ্রহণের পর মোল্লা রেজাউল করিম তার দপ্তরে বিগত সরকারের সময় অবৈধভাবে নানা সুযোগ প্রাপ্ত, অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করেন । এছাড়া মোল্যা রেজাউল করিম যোগদানের পরে তিনি বিগত সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী হাসান মাহমুদ ও তার ভাইদের জবরদখলে থাকা ৩৫৪ একর বনভূমি ও গড়ে তোলা গয়ালের ফার্ম, পোল্ট্রি ফার্ম, ফিসারী উচ্ছেদ করে সরকারি বনভূমি জবরদখল মুক্ত করেন। তিনি কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম জেলায় প্রায় ৭০০০ একর জবরদখল কৃত বনভূমি উদ্ধার করেন। মোল্লা রেজাউল বিগত ছয় মাসের মধ্যে
প্রায় সাড়ে চার হাজার অবৈধ ঘরবাড়ি ভেঙে বনভূমি মুক্ত করেন। ফলে ঐ মহলটি তার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগের পাশাপাশি চতুর্মুখী ষড়যন্ত্র শুরু করে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক চট্টগ্রামে কর্মরত এক বন কর্মকর্তা বলেন, " দীর্ঘ ১ যুগেরও বেশি সময় যাবৎ একটি মাফিয়া সিন্ডিকেট কোনরকম রাখ ঢাক না রেখেই প্রকাশ্যে বন কার্যালয়ের বদলি বাণিজ্য, টেন্ডার বাণিজ্য , অনিয়ম,দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি চালিয়ে আসছিল নির্বিঘ্নে। কিন্তু ৫ই আগস্ট এর পর মোল্লা রেজাউল করিম স্যার দায়িত্ব গ্রহণের করেই ঐ সিন্ডিকেট টি ভেঙ্গে দিতে সক্ষম হন। ফলশ্রুতিতে ওই সিন্ডিকেটের লোকজন মোল্লা রেজাউল করিম স্যারের বিরুদ্ধে নানা কাল্পনিক অভিযোগ আনয়ন সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কুৎসা রটনা করে আসছে"।
খোদ প্রেসক্লাব এর মত জায়গায় নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন ছাত্রলীগ নেতার সংবাদ সম্মেলনের ব্যাপারে জানতে চাইলে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্রগ্রাম মহানগরের যুগ্ম আহবায়ক সমন্বয়ক রিদওয়ান সিদ্দিকী বলেন, " অবিলম্বে এই মোয়াজ্জেম হোসেনকে আইনের আওতায় আনা হোক। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে বিতারিত শক্তি নিজেদের অস্তিত্বে টিকিয়ে রাখার জন্য এখন নানা সংগঠনের ব্যানারে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে। ছাত্র জনতাকে সাথে এসব পতিত স্বৈরাচারের দোসরদের অপচেষ্টা রুখে দেয়া হবে " ।
প্রকাশক ও সম্পাদক: সাব্বির আহমেদ সেন্টু
সহ সম্পাদক: ডিএম মাইনউদ্দিন আহাম্মেদ
ঠিকানা:মেজবাহ উদ্দিন প্লাজা (লিফট্ ৯ সি) ৯১ নিউ সার্কুলার রোড ঢাকা ফোন: +8801711970093