নিজস্ব প্রতিবেদক : জুলাই-আগস্টের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পরও থেমে নেই রাজধানীর ভাষানটেকের শীর্ষ সন্ত্রাসী কিলার ইব্রাহিম ও তার চক্রের চাঁদাবাজি-সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড। এলাকাবাসীর অভিযোগ—সরকার পরিবর্তনের আগে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ছত্রছায়ায় এবং এখন বিএনপির দাপটে একইভাবে চলছে চাঁদাবাজি ও জমি দখলের মহোৎসব। গত বছর পশ্চিম ভাষানটেকে ব্যাংক কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেনের বাড়ি ভেঙে দেয় ইব্রাহিমের সহযোগীরা। অভিযোগ, ৩০ লাখ টাকা চাঁদা না দেওয়ায় তার বাড়ি চুরমার করা হয়। বেলায়েত জানান, “৫ আগস্টের পর ভেবেছিলাম নিরাপত্তা পাবো, কিন্তু আবারও কিলার ইব্রাহিমের লোকজন শ্রমিকদের কাজ করতে দিচ্ছে না, সাইনবোর্ড ও দেয়াল ভেঙে ফেলছে।”ভয়ঙ্কর দখলচক্র: কারা আছে এর পেছনে?ভাষানটেক-কাফরুল এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয় এই চক্র জমি দখল, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, জাল দলিল, কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ ও খুনখারাবিতে জড়িত। স্থানীয়দের অভিযোগ—এই চক্র কালা জাহাঙ্গীর ও কিলার ইব্রাহিমের নাম ব্যবহার করে এলাকায় দাপট চালাচ্ছে। মাঠপর্যায়ে সক্রিয় রয়েছে—কালা ইব্রাহীম, জনি দেওয়ান, সালমা ভান্ডারী, লিমা, নুরজাহান নূরী, স্ট্যান্ড মানিক, যুবরাজ, রুপচাঁদ, শাকিল, রাসেল, জাহিদ, রনি, ফারুক, শফিক, মো. মজিবর রহমান, মো. সাগরসহ বহুজন।মামলা চলছে, দখলও চলছে:একাধিক মামলা-জিডি থাকার পরও চক্রটির দাপট কমেনি, বরং বেড়েছে। মামলা নং ৪৬৩/২২ (বাদী: অবসরপ্রাপ্ত সেনা অফিসার এস এম আনোয়ার হোসেন) – জমি দখলের অভিযোগ। ভাষানটেক থানা মামলা নং ১২(০২)/২০২৪ ভাষানটেক থানা জিডি: ৩১৭ (১৬/০৩/২৪), ৬৮১ (১৫/১২/২৪), ১১২ (০৩/০৭/২৫) নন-জিআর মামলা: ৬৫৩/২৪, ৪০/২৫ এসব মামলার একটিতেও উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নেই। বেলায়েত হোসেনের করুণ অভিজ্ঞতা ২০২৪ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে তার বাসায় ২০-২৫ জন অস্ত্রধারী হামলা চালায়। এতে দুই ভাড়াটিয়া আহত হন। একাধিক অভিযোগ ও জিডি করেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। সর্বশেষ ৩০ আগস্ট ২০২৫ তার জমির সীমানা প্রাচীর ভেঙে জমি দখলের চেষ্টা চালায় ইব্রাহিম বাহিনী। রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয়ের অভিযোগ: সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় এই চক্র দীর্ঘদিন ধরে সক্রিয়। বিশেষ করে স্থানীয় ক্ষমতাশালী নেতাদের মদদে জমি দখল ও ভবন দখলের ঘটনা বারবার ঘটছে। প্রশাসনের নীরবতা ও জনগণের দাবি: ভাষানটেক থানার ওসি মো. ফয়সাল দাবি করেছেন, “এলাকায় কোনো সন্ত্রাসীর আধিপত্য নেই। অভিযোগ পেলে খতিয়ে দেখা হবে।” তবে এলাকাবাসী বলছে, পুলিশের নীরবতা ও রাজনৈতিক আশ্রয়েই চক্রটি বহাল তবিয়তে সক্রিয়। জনগণের দাবি:
১. দখলদারদের উচ্ছেদ ও বিচারের আওতায় আনা।
২. রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় বন্ধ করা।
৩. জমির প্রকৃত মালিকানা নিশ্চিত করা।
৪. চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও কিশোর গ্যাং দমন করা।
এক সময় বাসস্থান ছিল নিরাপত্তার প্রতীক, আজ তা আতঙ্কের উৎস। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ভাষানটেক-কাফরুলের এই চক্র সমগ্র রাষ্ট্রের জন্য ভয়াবহ হুমকিতে পরিণত হতে পারে।