প্রেস বিজ্ঞপ্তি :
বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের গতকাল ২৮ সেপ্টেম্বর রবিবার গণমাধ্যমে দেওয়া একটি বক্তব্য চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। এই বক্তব্যে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাব ‘ দখল করা’ সংক্রান্ত তথ্য উপদেষ্টার মতো দায়িত্বশীল ব্যক্তির বক্তব্য চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের সদস্যদের মর্মাহত করেছে।
চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির নেতৃবৃন্দ মনে করেন, তথ্য উপদেষ্টাকে গণহত্যার উষ্কানিদাতা, ফ্যাসিবাদের দোসর দলবাজ সাংবাদিকরা মিথ্যা তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করেছে । প্রকৃত পক্ষে ৫ই আগস্ট বিকেলে হাজার হাজার বিক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে ভারতীয় দালাল ও ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্ত করেছিলো। সংক্ষুব্ধ ছাত্র জনতা চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে তালা লাগিয়ে দেয়। সৃস্ট অচলাবস্থা নিরসনে তৎকালীণ তথ্য উপদেষ্টা জনাব নাহিদ ইসলামের নির্দেশে সরকারের দায়িত্বশীল পর্যায় থেকে তদন্ত শেষে প্রতিবেদন অনুযায়ী ছাত্র জনতার আকাঙ্খার উপর ভিত্তি করে ২০২৪-এর নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে অন্তবর্তীকালীন কমিটি ঘোষণা করা হয়। গণমাধ্যমকে ব্যবহার করে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে বিতর্কিত করা, মুখরোচক সংবাদ পরিবেশন করে গণহত্যায় উষ্কানি দেয়া ছাড়াও চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পাশ্ববর্তী একটি দেশের প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতির জন্ম-মৃত্যু দিবস পালনসহ বিভিন্ন বিতর্কিত দিবস উদযাপন করে আসছিলো সংঘবদ্ধ চক্র।
চট্টগ্রামের সাংবাদিকদের পাশাপাশি সর্বস্তরের ছাত্র জনতা তিন যুগ ধরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গজিয়ে উঠা দলবাজ চক্র- ফ্যাসিবাদের দোসর মুক্ত প্রেসক্লাব দেখতে চায় বলেই সরকার সেই উদ্দ্যেগ নিয়েছিলো। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের অচলাবস্থা নিরসনে গ্রহনযোগ্য ফ্যাসিবাদবিরোধী সাংবাদিক নেতাদের সমন্বয়ে অন্তবর্তীকালীন কমিটি গঠনের ব্যবস্থা গ্রহন করেছিলো।
কিন্তু সম্মানিত তথ্য উপদেষ্টার বক্তব্যে চট্টগ্রামের ছাত্র জনতার অর্জনকে ‘দখল’ তকমা দিয়ে ছাত্রজনতার গণ অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেয়া চট্টগ্রামের ছাত্র জনতার অবদানকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা হয়েছে।
উল্লেখ করা প্রয়োজন অন্তবর্তী কমিটি গঠনকল্পে বিবদমান সাংবাদিকদের দুইপক্ষের প্রতিনিধি হিসেবে তিনজন করে নাম দিতে বলা হলেও তৎকালীন কমিটি নাম জমা না দিয়ে জেলা প্রশাসকের কাছ থেকে সময় নিয়ে প্রতারণা করে আদালতের দারস্থ হন। ইতিমধ্যে ৩১ শে ডিসেম্বও ২০২৪ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে পুরোনো কমিটির মেয়াদ উত্তীর্ণ (২ বছর) হয়ে যায়।
বছর জুড়ে চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের অন্তবর্তীকালীন কমিটির নেতৃত্বে অধিকার বঞ্চিত প্রকৃত সাংবাদিকদের সদস্য পদ প্রদান, গণহত্যায় উষ্কানিদাতা সাংবাদিক নামধারী আওয়ামী লীগ কর্মীদের বহিষ্কার, ভবন থেকে বিতর্কিত কর্ণার ও ব্যক্তির ছবি অপসারণ, বঙ্গবন্ধু হলের নাম পরিবর্তন করে জুলাই বিপ্লব স্মৃতি হল করা, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া সমন্বয়কদের স্বীকৃতি স্মারক প্রদান’সহ চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে প্রয়োজনীয় সংস্কার কাজে ইতিবাচক সফলতা দেখিয়েছে।
মাননীয় তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম ফ্যাসিবাদের দোসর সাংবাদিকদের দেয়া মিথ্যা তথ্যে বিভ্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে নির্বাচন করা হচ্ছে না বলে মন্তব্য করলেও প্রকৃতচিত্রে ভিন্ন। মনে রাখা প্রয়োজন ছাত্র জনতা- সাংবাদিকদের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ফ্যাসিবাদের ঘাঁটির পতন হয়েছিলো । যাচাই বাছাই করে প্রেসক্লাবে নতুন যোগ্য সদস্য অন্তভূক্তকরণ, সংবিধানের প্রয়োজনীয় সংস্কার , সমাজসেবা অধিদপ্তরের অনুমোদন গ্রহনের আবেদন, ভোটার তালিকা তৈরির মতো প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষে প্রেসক্লাবের নির্বাচন চায় ফ্যাসিবাদ বিরোধী সাংবাদিকরা। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে গণ অভ্যুত্থানের বিরোধিতা করে সমাবেশ ডাকাসহ গণহত্যায় উষ্কানিদাতাদের কোন স্থান হবে না মর্মে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেছে বৈষম্য বিরোধী আন্দোলনের অধিকাংশ সমন্বয়ক, ছাত্রনেতারাও। কারণ এসব দোসর সাংবাদিকরাই দেশ ও দেশের মানুষের পক্ষে ভূমিকা না রেখে ফ্যাসিস্ট’ হাসিনাকে আরও হিংস্র হতে সাহস যুগিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রক্ত ঝরানোর ইন্ধনদাতা ‘দালাল’ সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়েছে সেই স্মারকলিপিতে।
তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলম চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে জুয়া চলছে মর্মে যে বক্তব্য দিয়েছেন সেটি আপত্তিকর। আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, ঢাকা জাতীয় প্রেস ক্লাবেও দীর্ঘসময় ধরে হাউজি খেলা চলে আসছে। সরকার অনুমোদিত হাউজির জন্য প্রেসক্লাবের হল ভাড়া দেয়া কোনভাবেই আইনের ব্যত্যয় নয়। বরং চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে দীর্ঘদিন ধরে ( আগের কমিটির সময়ও) হাউজির জন্য হলরুম ভাড়া দেয়া হয়ে আসছে – এটি নতুন কিছু নয়। ভাড়ার টাকায় প্রেসক্লাবের কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতা পরিশোধ ছাড়াও সদস্যদের কল্যাণে আনুষঙ্গিক কার্যক্রম পরিচালনা করার রীতিও পুরোনো।
প্রসঙ্গত, প্রেসক্লাব সাংবাদিকদের একটি সার্বজনীন প্রতিষ্ঠান। এ প্রেসক্লাব বরাবরই দেশ ও জাতির দুঃসময়ে এগিয়ে এসেছে। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবকে ভারতীয় তাঁবেদারীর ইজারাদার ও আওয়ামী প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে এর পবিত্রতা ও ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিয়েছে একটি স্বার্থান্বেষী মহল। এখনো চট্টগ্রামে ফ্যাসিবাদের দোসর একজন কথিত সাংবাদিককেও আইনের আওতায় আনা হয়নি। অথচ সাংবাদিক নামধারীরা জুলাই আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের ধরে পুলিশে সোপর্দ করেছিলো, নারী সাংবাদিকদের অপদস্ত করেছিলো। এদের কাউকে আইনের আওতায় না এনে সরকার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে।’
Leave a Reply