চট্টগ্রাম ব্যুরো অফিস।

চট্টগ্রামে রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (রিহ্যাব)-এর ১৬ তম আবাসন মেলা শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৩ ফেব্রুয়ারি) থেকে পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু’র বেভিউতে। আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চলা এ মেলা নিয়ে ইতিমধ্যে চট্টগ্রামের সচেতন মহল গুলোতে জম্ম দিয়েছে নানান আলোচনা সমালোচনা। বিশিষ্টজনেরা বলছেন, রিহ্যাব মেলায় অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠান গুলোর বিরুদ্ধে রয়েছে নানান ধরনের গুরুতর প্রচরণা , দখল ও নিয়ম বহির্ভূতভাবে নির্মাণের অভিযোগ। আবার কেউ কেউ করছেন কথা দিয়ে কথা না রাখা সহ ইমারত আইন মানছেন না ,এসব প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিবছর রিহ্যাব মেলার নামে প্রতারণা আসর বসছে বলে অভিযোগ বেশ কয়েকজন ভুক্তভোগীদের।

আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির অংগ সংগঠন রিহ্যাব ।
রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান
হাজী দেলোয়ারের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি লোমহর্ষ তথ্য * সাতকানিয়া উপজেলা আলীগের সহসভাপতি, আরএফ বিল্ডাসের মালিক * তিনি ২০২৪ সালের নির্বাচনে সাতকানিয়া থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিল। * চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সেক্টর কমান্ডার ফোরামের সাবেক সহ-সভাপতি* তিনি ১৭ বৎসর বিএনপি ও জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করেন এবং তাদেরকে এলাকায় প্রবেশ করতে বাধা সৃষ্টি করেন।
জুলাই আগস্ট বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন প্রতিহত করতে অনেক টাকা খরচ করেছিলেন। * ওয়ার্ল্ড বিচ রিসোর্টের অন্যতম স্বত্বাধিকারী হাজী দেলোয়ার হোসেন (৬৫ কক্সবাজার জেলা ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক আবু মোহাম্মদ মারুফ আদনানের বিরুদ্ধে হোটেলে ভাতের বিল না দেওয়ার অভিযোগ উত্থাপনের ঘটনায় ২০২৩ হোটেল ব্যবসায়ী মামলায় হাজী দেলোয়ারকে আসামী করেছিল।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, দীর্ঘদিন যাবৎ আওয়ালীগের দোসর কাইয়ুম চৌধুরী এই মেলা পরিচালনা করে আসছিলেন। পরিবর্তিত পরিস্থিতে আবদুল কাইয়ুব সামনে না আসলেও তার অনুসারীরা এবার মেলার দায়িত্ব নিয়েছেন। ৫ আগস্ট এর পরে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে ফ্যাসিস্ট খুনি হাসিনার দোসরা পালিয়ে গেলেও এখনো বিদর্পে বহাল তবিয়তে গণহত্যাকারী এবং গণহত্যার ইন্ধনদাতারা। তাদের মধ্যে অন্যতম একজন রিহ্যাব এর ভাইস প্রেসিডেন্ট ও চট্টগ্রাম রিজিওনাল কমিটির চেয়ারম্যান সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি হাজী দেলোয়ার হোসাইন। অথচ, আয়োজক কমিটির মধ্যে আওয়ামী লীগের দোসর , ছাত্র ,জনতার গণঅভ্যুত্থানের বিপক্ষে ,গণহত্যার পক্ষে নেওয়া চিহ্নিত দোসর থাকলেও গত ১৩ ফেব্রুয়ারি বৃহস্পতিবার দুপুরে বিএনপির রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের সময়কালে দমন নিপীড়নের শিকার, দীর্ঘ ১৫ থেকে ১৬ বছর বিভিন্নভাবে হেনস্তার শিকার হওয়া এবং নির্যাতিত পীড়িত মজলুম জননেতা পরিচ্ছন্ন রাজনীতিবিদ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক ও বর্তমান চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন এ সব আওয়ামী দোসরদের সাথে নিয়ে এ ফিতা কেটে আবাসন মেলা উদ্বোধন করেন। এ নিয়ে ত্যাগী নির্যাতিত মাঠকর্মী এবং রাজনীতিবিদদের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে, উদ্বোধনী দিনের অনুষ্ঠানে মেয়র ডা শাহাদাত হোসেন এর সামনেই গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অশোভন আচরণ করে রিহ্যাব আবাসন মেলা আয়োজক কমিটির বেশ কয়েকজন। এ সময় উপস্থিত মেয়রের হস্তক্ষেপে পরে বিষয়টি সমাধান হলেও দেশের বিভিন্ন জায়গায় আওয়ামী লীগের দোসর বিন্নভাবে প্রতিষ্ঠিত হইয়া আবারও প্রিয় বাংলাদেশকে কলুষিত করতে মরিয়া হইয়ে উঠেছে , আওয়ামী লীগের মতো ছাত্র জনতার আন্দোলনে গণহত্যা হত্যাকারী দলের পদ্মারী নেতারা নানান রূপে নানান বেশি প্রতিষ্ঠিত হইয়ে দেশকে বিভিন্নভাবে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে সেই সাথে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, সফল অপারেশন ডেভিল হান্ট !! কিন্তু গণমাধ্যম কর্মীদের মধ্যে এ নিয়ে তৈরি হয়েছে সংশয়,ও আতংক বিরাজ করছে জনমনে বর্তমান সামগ্রিক উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি দলীয় নেতাকর্মী ও অন্যান্য সুশীল সমাজের নেতৃবৃন্দদের মধ্যে এ রিহ্যাব আবাসন মেলা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা চলছে পুরোদমে। মেলায় রহস্যজনক কারণে ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের কোন চিত্র তুলে ধরা বা কোন স্টল রাখা হয়নি !! যাদের ত্যাগের বিনিময়ে আজকে মানুষ স্বাধীনভাবে কথা বলতে পারছে ৩৬ জুলাই এ গণঅভ্যুত্থানে ১৫০০ র উপরে শহীদ হয়েছে ,১৩০০০ এর উপরে আহত, কারো হাত নাই, কারো পা নাই কারো চোখ নাই ,এখনো দেশের বিভিন্ন হসপিটালে ও নিজ বাসায় আহতরা ব্যথায় ব্যতীত হইয়ে কাতরাচ্ছে । এভাবে চলতে থাকলে ছাত্র জনতার গণঅভ্যুত্থানে শহীদি রক্তের সাথে বেইমানি হবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট মহল এবং বিশিষ্টজনেরা।
আবার, এসব আয়োজক হিসেবে যেসব প্রতিষ্ঠানের নাম এসেছে প্রায় প্রতিষ্ঠানের নামে রয়েছে প্রতারণা-ভূমি দখল ও পাহাড় কাটা সহ পুকুর ভরাটের অভিযোগ।

অনুসন্ধানে জানা যায়, মেলার অন্যতম আয়োজক ফিনলে প্রপার্টিজ এর বিরুদ্ধে চট্টগ্রাম নগরীত পাহাড় কেটে বহুতল আবাসিক ভবন তৈরির অভিযোগ রয়েছে। গেল ২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর পাহাড় কাটার প্রমাণ পায় পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম। পরিবেশ অধিদফতর চট্টগ্রাম মহানগরের উপ-পরিচালক মিয়া মাহমুদুল হকের নেতৃত্বে এ অভিযান পরিচালিত হয় এবং এর সত্যতা পাওয়া যায়। কাতালগঞ্জের ডক্টরস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় অভিযানে ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেডের প্রকল্প পরিদর্শনে যায় পরিবেশ অধিদপ্তরের টিম। সহকারী পরিচালক সংযুক্তা দাশ গুপ্তা এ বিষয়ে জানান, ‘কাতালগঞ্জের ডক্টরস হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ১৮ তলা ভবন নির্মাণের কাজে ফিনলে প্রপার্টিজ লিমিটেড এর বিরুদ্ধে পাহাড় কাটার অভিযোগ পেয়ে সেখানে অভিযান চালিয়ে পাহাড় কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে।

এ রিহ্যাব ফেয়ারে অংশগ্রহণ করা প্রতিষ্ঠান সিপিডিএল এর বিরুদ্ধে রয়েছে শত বছরের পুরনো পুকুর ভরাটের অভিযোগ। নগরীর খুলশীর ওয়ার্লেস মোড়ে পুরাতন জামে মসজিদের পিছনে সিপিডিএল ডেভেলপারের বিরুদ্ধে এই শত বছরের পুরনো পুকুর ভরাটের অভিযোগ উঠে গত ৯ জানুয়ারি, ২০২৫। পরে বিষয়টি জানতে পেরে পরিবেশ অধিদপ্তর বেআইনি এ কাজের জন্য মামলা করেছেন। জানা গেছে, খুলশী এলাকায় মোসাম্মত নুর নাহার বেগম ও মোসাম্মত মসুদা বেগমের মালিকাধীন পূর্ব পাহাড়তলী মোজার ৬১ শতকের বিশাল আকৃতির পুকুরটি স্কেভেটরের মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ চলমান রেখেছে সিপিডিএল প্রতিষ্ঠান।এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম নগর দায়িত্ব প্রাপ্ত পরিচালক সোনিয়া সুলতানা জানান, পুকুর ভরাট করে কোন কিছু করার কোন সুযোগ নেই, সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সত্যতা পাওয়া গেছে, আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য ভূমি অফিসের সকল কাগজপত্র যাচাই বাছাই করা হচ্ছে। অপরাধ প্রমাণ হলেই পুকুর ভরাটকারীদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে, ভুতের মুখে যেন রাম রাম, পুকুর ভরাটের অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিডিএল কর্মকর্তা হাসিব রশিদ তখন বলেছিলেন, সেখানে কোন পুকুর নেই এবং পুকুর ভরাটের কাজ চলছে না। জায়গাটিতে করা হচ্ছে কৃতিম খেলার মাঠ ট্রাফ।

অতচ, সরজমিনে পুকুর ভরাটের সব ধরনের প্রস্তুতি ও প্রমাণ পাওয়া যায়।

অপর আয়োজক আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে রয়েছে অভিযোগের পাহাড়। খাস জমি দখলের অভিযোগে আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার নামে মামলা রয়েছে। দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের (ঢাকা-১) সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ নেয়ামুল আহসান গাজী এ মামলা করেন। এ মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আশিয়ান ল্যান্ডস ব্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলক্ষেত এলাকায় ৭ দশমিক ৯ একর খাস জমি দখলের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এসব জমি ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট রাজস্ব সার্কেলের বরুয়া, দক্ষিণখান ও উত্তরখান মৌজায় পড়েছে। বরুয়া মৌজায় ৪২টি দাগে ২ দশমিক ৭০ একর, দক্ষিণখান মৌজায় ৯৭টি দাগে ৪ দশমিক ৯ একর এবং উত্তরখান মৌজায় চারটি দাগে দশমিক ২৮ একর খাস জমি দখল করা হয়েছে। গণমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিয়ে আবাসিক প্লট হিসেবে এ জমি বিক্রির প্রমাণও পেয়েছে দুদক। এই মামলায় আশিয়ান ল্যান্ডস ডেভেলপমেন্ট লিমিটেডের এমডি মো. নজরুল ইসলাম ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৪২০ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। এর আগে আশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধে এজাহার দায়ের করার সুপারিশ করে আইনি মতামত দেন দুদকের আইন অনুবিভাগ।

এমতাবস্থায়, রিহ্যাব আবাসন মেলা নিয়ে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছে জনমনে। মানুষ তাদের সারাজীবনের সংঞ্চয় কাদের হাতে তুলে দিয়ে স্বপ্ন পূরণের আশ্বাস পাবেন এমন টাই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন মেলায় গিয়ে !