বিনোদন প্রতিবেদক:
১৬৪তম জন্মবার্ষিকীতে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে শ্রদ্ধা জানিয়ে ঢাকার বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে “বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্মাননা ২০২৫” ও আলোচনা সভার আয়োজন করে প্রকাশনী সংস্থা বাঙালি। শিল্পী সাকিনা কাইউম এর রবীন্দ্র সংগীতের মধ্যদিয়ে শুভসূচনা অনুষ্ঠানটি পরিণত হয় এক সাহিত্যিক মিলনমেলায়, যেখানে গান, কবিতা, আবৃত্তি আর বক্তৃতায় মুখরিত হয়ে ওঠে সুন্দর বিকেল। কবি আরিফ নজরুল বলেন, “রবীন্দ্রনাথ শুধু কবি নন, তিনি আমাদের আত্মার এক স্থায়ী ঠিকানা। প্রতিদিনের সাহিত্য কর্মকাণ্ডের জরুরি উপাদান তিনি। তিনি আমাদের জাতীয় সঙ্গীত রচয়িতা, আমাদের জাতিসত্তার চিরন্তন প্রতিভূ।” স্বাগত বক্তব্যে শেখ সাইদুর রহমান সাইদ বলেন, “এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা নতুন প্রজন্মকে বিশ্বকবির চেতনায় উদ্বুদ্ধ করতে চাই। তাঁর সাহিত্যকে শুধু পাঠ্যসূচির মধ্যে নয়, জীবনের প্রতিটি স্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।”
প্রধান অতিথি সৈয়দ তোসারফ আলী বলেন:
“রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর—এই নামটি উচ্চারণেই এক মহাজাগতিক আভা জেগে ওঠে, যেন বাংলা ভাষা ও মননের এক শুদ্ধতম উচ্চারণ। তিনি কেবল কবিগুরু নন, আমাদের আত্মপরিচয়ের এক দুর্নিবার স্তম্ভ। তাঁর সাহিত্য আমাদের মনে কবিতার যে কান্না জাগায়, তা আমাদের অন্তরতম চেতনাকে দোলা দেয়। কিন্তু রবীন্দ্রনাথ ছিলেন কেবল হৃদয়ের কবি নন—তিনি ছিলেন সমাজের সূক্ষ্মতম বীক্ষক, সময়ের সুনিরীক্ষণকারী, এবং একটি আধুনিক জাতির স্বপ্নদ্রষ্টা।
এই সময়ে, যখন আমরা বিপন্ন মানবতার কোলাহলে জর্জরিত, তখন রবীন্দ্রনাথের চিন্তা হয়ে উঠতে পারে এক উত্তরণ-দিশারী। তাঁর ‘সাধনা’, ‘সভ্যতার সংকট’ ও ‘জাতীয়তাবাদ’ নিয়ে ভাবনাগুলি আজও আমাদের জাতীয় ও বৈশ্বিক পরিপ্রেক্ষিতে দিকনির্দেশ করে। তাই এই ধরনের সাহিত্যিক আয়োজন কেবল শ্রদ্ধাঞ্জলি নয়, এটি আমাদের আত্মার জাগরণ।”
আলোচক অধ্যাপক সরকার আবদুল মান্নান বলেন:
“বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর শুধু এক ব্যক্তিমাত্র নন—তিনি একটি বোধ, একটি সময়ের সম্মিলিত সঞ্চার, একটি জাতিসত্তার গভীরতম স্রোতের নাম। তাঁর শিক্ষা, সাহিত্য ও দর্শন বাংলা সমাজকে যে ভিত দিয়েছেন, তা কেবল ঐতিহ্যের নয়, ভবিষ্যতেরও রূপরেখা।
রবীন্দ্রনাথ আমাদের মনে করিয়ে দেন—মানুষ কেবল যন্ত্রের যোগফল নয়, সে হৃদয়েরও সমীকরণ। তাঁর সাহিত্য শেখায়—জীবনকে ভালোবাসো, সমাজকে প্রশ্ন করো, এবং মানবতাকে ধারণ করো। তাঁর সাহিত্য পাঠ মানে কেবল রোমান্টিকতা নয়, বরং চিন্তা ও মূল্যবোধকে বারবার নিরীক্ষণের এক ধ্রুপদী অনুশীলন।”
বিশেষ অতিথি কবি গোলাম কিবরিয়া পিনু বলেন, “রবীন্দ্রনাথের কবিতা মানবতার এক অনন্ত সুর, যেখানে হৃদয়ের গভীরতম কথাগুলো ধ্বনিত হয়।”বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন ও অসহযোগ আন্দোলনে রবীন্দ্রনাথ প্রতিবাদী গান লিখেছিলেন। তিনি প্রতিবাদী একজন মহান পুরুষ ছিলেন।
বিশেষ অতিথি চাঁপাইনবাবগঞ্জ চেম্বার অব কমার্সের পরিচালক মো. আরিফ উদ্দিন বলেন, “রবীন্দ্রনাথের ভাবনা আমাদের শিল্প ও বাণিজ্যচেতনারও অনুপ্রেরণা হতে পারে, কারণ তাঁর দর্শন ছিল সর্বাঙ্গীন, সুসমন্বিত মানবজীবনের জন্য।”
সভাপতি কবি পুলিন রায় বলেন, “রবীন্দ্রনাথকে স্মরণ মানে নিজের ভেতরের আলো জ্বালিয়ে নেওয়া, প্রতিদিনের আত্মার গোপন সন্ধিক্ষণে এক দীপ্তির সংলাপ।”
কবি ও সাংবাদিক আইরিন সুলতানা বলেন, “এই আয়োজন কেবল উৎসব নয়, বরং সাংস্কৃতিক দায়বদ্ধতার এক রূপ, যার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের ঐতিহ্য ও উত্তরাধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা জানাই।”
খ্যাতিমান আবৃত্তিশিল্পী জেসমিন বন্যাসহ অনেকেই আবৃত্তি করেন।
অনুষ্ঠানে দেশের খ্যাতিমান কয়েকজন কবি, লেখক, শিল্পী, সাংবাদিক ও সাহিত্যিককে ‘বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সম্মাননা ২০২৫’ প্রদান করা হয়। সম্মাননার মাধ্যমে তাঁদের সাহিত্যসাধনা, সাংস্কৃতিক কর্মযজ্ঞ ও রবীন্দ্রনাথ চেতনায় অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া হয়।এ আয়োজনে নারায়ণগঞ্জের তিন গুণীব্যক্তি। কবিতায়ি অবদানের জন্য প্রফেসর মোঃ আমির হোসেন, কথাসাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য সাব্বির আহমেদ সেন্টু,ছড়া সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য নজরুল ইসলাম শান্তু এবং সাহিত্য ও সমাজসেবায় বিশেষ অবদানের জন্য নূরজাহান নীরা।
Leave a Reply